Breaking
Loading latest news…

প্রতীক্ষা: একটা ভুতুড়ে গল্প



কলকাতার এক পুরনো গলির কোণে দাঁড়িয়ে আছে এক ভাঙাচোরা দোতলা বাড়ি। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘অভিশপ্ত’ হিসেবে পরিচিত। বাড়িটায় কেউ থাকে না, অথচ রাত হলেই নাকি এই বাড়ি থেকে ভেসে আসে করুণ কান্নার শব্দ, কখনো ভেসে আসে নুপুরের ধ্বনি, কখনো-বা জানলায় এসে দাঁড়ায় সাদা শাড়ি পরা এক নারী মূর্তি।

সাহসী কলেজ পড়ুয়া অরুণ, ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী নয়। কৌতূহলবশত একদিন সে পাড়ার লোকের সাবধানবাণী উপেক্ষা করে সেই বাড়িতে প্রবেশ করল। ধুলো আর মাকড়সার জালে ভরা সেই বাড়ির সিঁড়ির নিচে সে খুঁজে পেল এক পুরনো টিনের বাক্স।
বাক্স খুলতেই বেরিয়ে এল হলুদ হয়ে যাওয়া এক চিঠি। তাতে লেখা ছিল:

"প্রিয় রমা,
যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কিন্তু তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি—আমি ফিরে আসব। আমার জন্যে অপেক্ষা করো।
"

চিঠিটা পড়তেই হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস বইল, চারপাশ অন্ধকার হয়ে এল। পেছন থেকে ভেসে এল এক নারীকণ্ঠের ফিসফিসানি:
— “তুমি তো বলেছিলে, তুমি ফিরবে। কিন্তু আজও ফিরলে না…”

অরুণ ভয়ে পেছন ফিরে তাকাল, কিন্তু সেখানে কেউ নেই। হঠাৎ চিঠিটা উড়ে গিয়ে দরজার দিকে গেল, আর দরজা আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেল। অন্ধকার ঘরের মধ্যে সেই কণ্ঠ আবার বলে উঠল,
— “আমি এখনো অপেক্ষা করছি…”

তীব্র আতঙ্কে অরুণ চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এল, কিন্তু ততক্ষণে অরুণ জ্ঞান হারিয়েছে।

পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর অরুণ জানতে পারে — ওই বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা ছিলেন রমা নামের এক মহিলা। তাঁর স্বামী ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত, শহীদ হয়েছিলেন ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধে।
রমা এই খবরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারতেন না যে তার স্বামী আর ফিরবে না। প্রতিদিন জানালায় দাঁড়িয়ে থাকতেন, তার জন্য চিঠি লিখতেন, অপেক্ষা করতেন।

রমা মারা গেছেন বহু বছর আগে, কিন্তু তার প্রতীক্ষা আজও শেষ হয়নি।

সেই থেকে অরুণ আর কখনও ওই বাড়ির ধারেকাছে যায় না। শুধু মাঝে মাঝে, রাতের বেলা যদি জানালার দিকে তাকায়, এক ছায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে — তার হাতে সেই চিঠি।


গল্পটার ভিডিও দেখুন এই লিঙ্কে: https://youtu.be/pAIxaJX1t-o?si=o6RZYk8PGAgMKL8G



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ