Breaking
Loading latest news…

ইতালিতে বুর্কা-হিজাব নিষিদ্ধ: মেলোনির সাহসী পদক্ষেপ, ভারতের সামনে কি নতুন পথ?


ইউরোপের ভূখণ্ডে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্ম দিয়েছে ইতালির মেলোনি সরকার। প্রকাশ্যে বুর্কা ও হিজাব নিষিদ্ধ করার বিল পার্লামেন্টে পেশ করে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি শুধু নিজের দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনার ঝড় তুলেছেন। 'মেলোডি টিম' বলে পরিচিত মেলোনি ও মোদির জুটির এই ইতালীয় পর্বটি কি এবার ভারতেও একই ধরনের বিতর্ক ও পরিবর্তনের ঢেউ আনবে, সেই প্রশ্ন এখন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।


ইতালির ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত:

গত ৮ই অক্টোবর ইতালির সংসদে 'ব্রাদার্স অফ ইতালি' দলের তিন সাংসদ কর্তৃক একটি বিল পেশ করা হয়েছে, যা অনুযায়ী প্রকাশ্য স্থানে মুখ ঢাকা পোশাক, বিশেষ করে বুর্কা ও হিজাব, পরা নিষিদ্ধ হবে। এই আইন অমান্য করলে ৩০০ থেকে ৩০০০ ইউরো (প্রায় ২৬,০০০ থেকে ২.৬ লাখ টাকা) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। বিলটির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশে ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করা, সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ানো এবং মহিলাদের আরও স্বাধীনতা প্রদান করা। মেলোনি সরকারের দাবি, এই আইন মুসলিম নারীদের কোনো চাপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সাল থেকে ইতালিতে মুখ ঢাকা পোশাক পরার উপর একটি সাধারণ নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু তাতে 'বুর্কা' বা 'হিজাব' শব্দের স্পষ্ট উল্লেখ ছিল না। নতুন বিলটি সেই শূন্যতা পূরণ করে এই ধরনের পোশাককে সুনির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ করতে চাইছে, যা নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারী কার্যকলাপ রুখতে সহায়ক হবে।


ইউরোপের পথে ইতালি:

ইতালির এই পদক্ষেপ ইউরোপে নতুন নয়। ২০১১ সালে ফ্রান্স প্রথম প্রকাশ্য স্থানে বুর্কা-হিজাব নিষিদ্ধ করে। এরপর ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস সহ ইউরোপের আরও অনেক দেশ একই পথে হেঁটেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করছে, ফ্রান্সের সাম্প্রতিক দাঙ্গা এবং বিভিন্ন স্থানে বেড়ে চলা অস্থিরতা প্রমাণ করে যে ধর্মের নামে অস্থিরতা ছড়ানো হচ্ছে। এ অবস্থায় নিজেদের দেশের নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রক্ষা করা অপরিহার্য।


বামপন্থীদের বিরোধিতা:

ইতালিতেও এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বামপন্থী দলগুলো। তারা এটিকে 'ইসলাম বিরোধী' আখ্যা দিয়ে বলছে, এই আইন ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে এবং মুসলিম নারীদের আরও প্রান্তিক করে তুলবে। তবে মেলোনি সরকার দৃঢ়ভাবে বলছে, এটি নারীদের স্বাধীনতার জন্য আনা হয়েছে, যাতে তারা বাধ্য হয়ে মুখ ঢাকা পোশাক না পরে।


ভারতের সামনে প্রশ্ন:

ইতালির এই সিদ্ধান্তের পর ভারতের দিকেও আঙুল উঠেছে। যেখানে জর্জিয়া মেলোনি নিজের দেশের সুরক্ষার জন্য এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছেন, সেখানে ভারত কি 'সেকুলারিজম' রক্ষার তাগিদে সুরক্ষাকে অবহেলা করেই যাবে? দেশের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় ভাবাবেগের মধ্যে কোনটি অগ্রাধিকার পাবে, সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই ভোটের সময় মুখ ঢাকা পোশাকে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে একটি পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এই পদক্ষেপ দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার অতীতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথার অবসান ঘটিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। রেল স্টেশন, এয়ারপোর্ট, বাস স্ট্যান্ডের মতো জনাকীর্ণ ও সংবেদনশীল স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং যেকোনো নাশকতার সম্ভাবনা কমাতে মুখ ঢাকা পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মেলোনি যদি পারেন, তবে 'মেলোডি টিমের' অন্য সদস্য নরেন্দ্র মোদি কবে এমন পদক্ষেপ নেবেন, সেই অপেক্ষাতেই থাকবে দেশবাসী।


উপসংহার:

ইতালির এই আইন শুধু একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি সারা বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে ভারতের মতো বহুসংস্কৃতির দেশে, যেখানে নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে ইতালির এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য নতুন চিন্তাভাবনার খোরাক জোগাবে।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ